মিয়ানমারে সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা গ্রহণের বর্ষপূর্তির দিনটিতে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
মিয়ানমারের জনগণকে মঙ্গলবার বাড়িতে অবস্থান করে ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে প্রতিবাদের আহ্বান জানানো হয়েছে জান্তাবিরোধী আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে।
অন্যদিকে, মঙ্গলবারের এই ধর্মঘটে যারা অংশ নেবে তাদের কারাগারে পাঠানোর হুমকি দিয়েছে দেশটির সামরিক শাসকরা। খবর আলজাজিরা ও রয়টার্সের।
২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী।
সু চি ও তার দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) শীর্ষস্থানীয় নেতাদের আটক করে কারাবন্দি করা হয়। তারপর থেকে দেশটিতে বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে।
গ্রেফতারের পর সু চিকে (৭৬) এক ডজনেরও বেশি মামলায় জড়িয়ে তার বিচার করা হচ্ছে। সবগুলো মামলার সর্বোচ্চ শাস্তি একত্র করলে দেড়শ বছরেরও বেশি কারাদণ্ড হয়।
সু চি যেন আর কখনোই রাজনীতিতে ফিরতে না পারেন তা নিশ্চিত করতেই এসব মামলার নীলনকশা করা হয়েছে বলে মত সমালোচকদের।
২০২০ সালের নির্বাচনে বিশাল জয় পেয়ে নির্বাচিত হওয়া এনএলডি সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করায় গত বছর মিয়ানমারজুড়ে ব্যাপক প্রতিবাদের ঢেউ বয়ে যায়।
কিন্তু সামরিক জান্তা ব্যাপক ধরপাকড় ও রক্তপাতের মধ্য দিয়ে বিক্ষোভ দমনের উদ্যোগ নেয়। এতে কয়েকশ বেসামরিক বিক্ষোভকারী নিহত হওয়ার পর প্রতিবাদকারীরা সেনাবাহিনীর মোকাবেলায় ‘পিপলস ডিফেন্স ফোর্স’ গঠনের দিকে ঝুকে পড়ে।
আন্দোলনকারীরা এখন লোকজনকে ধর্মঘট করার আহ্বান জানাচ্ছে, তাদের বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য হঠাৎ প্রতিবাদ মিছিল বের করছে, পুস্তিকা বিতরণ করছে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করছে।
ধর্মঘটটি জান্তার প্রতি একটি শক্তিশালী বার্তা দেবে, এমন আশা করা তরুণ আন্দোলনকারী নান লিন বলেন, আমাদের গ্রেফতার করা হতে পারে আর জীবন কারাগারেই কেটে যেতে পারে। এমনকি জেলখানায় জান্তাদের অত্যাচারে মারাও যেতে পারি।
নিজেদের ধর্মঘটের সমন্বয়কারী পরিচয় দেওয়া একটি গোষ্ঠী বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি মিয়ানমারের ছায়া সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার এবং সংঘাতপূর্ণ এলাকাগুলোর উপর ‘নো ফ্লাই জোন’ জারি করা ও জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছে।
মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলীয় শহর মায়িতকিনায় পথে পথে নোটিশ টাঙিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রতিবাদে অংশ না নেওয়ার জন্য সতর্ক করেছে সামরিক বাহিনী।
এরকম একটি নোটিশের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসেছে, তাতে লেখা ছিল, যারা এই নীরব প্রতিবাদে অংশ নেবে তাদের এই আইন অনুযায়ী শাস্তি দেওয়া হবে।
এতে সন্ত্রাসবিরোধী, রাষ্ট্রদ্রোহিতা, অবাধ্যতা ও টেলিযোগাযোগ আইনের অধীনে তিন থেকে সর্বোচ্চ ২০ বছর পর্যন্ত সাজা হতে পারে বলে জানানো হয়েছে।
সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমারের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়ায় সাধারণ জনগণের জীবন কঠিন হয়ে পড়েছে।
মিয়ানমারের আন্দোলনকারী গোষ্ঠী অ্যাসিসট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন অব পলিটিক্যাল প্রিজনার্সের (এএপিপি) তথ্যের উদ্ধৃতি দিয়ে জাতিসংঘ জানিয়েছে, অভ্যুত্থানের পর থেকে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীগুলো এ পর্যন্ত অন্তত দেড় হাজার বেসামরিককে হত্যা ও ১১৮৩৮ জনকে গ্রেফতার করেছে।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।